15

1.1K 41 0
                                    

১৫.

সবাই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলে মেঘালয় মিশুর কাছে এসে দাঁড়ালো। মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ' সত্যিই ডিভোর্স চাইছো তুমি?'

মিশু মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললো, 'হ্যা চাইছি।'

- 'ডিভোর্স ছাড়া আর কোনো সমাধানের কথা ভাবতে পারবে না?'

মিশু একটু নিশ্চুপ থেকে বললো, 'আপনি কি চাইছেন মন থেকে? সত্যি করে বলুন তো?'

- 'আচ্ছা আমরা দুটো দিন সময় নিই। তারপর ডিসিশানে আসা যাবে। যদি ডিভোর্স নেয়াটা জরুরি হয়,তাহলে ডিভোর্স। আর যদি একে অপরকে...'

- 'সেটা কখনোই সম্ভব না। সকাল থেকে না খেয়ে আছেন, আসুন খেয়ে নিবেন।'

কথাটা বলেই মিশু মুখটা খেমটা মেরে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। মেঘালয় মুগ্ধ ওর এমন তেজ দেখে। মিশু যতবার ডিভোর্সের কথা বলছিলো, ততবার ই মেঘালয়ের বুকটা কেমন যেন করছিলো। এত দ্রুত সেরকম কোনো সিদ্ধান্তে আসার দরকার নেই। কয়টা দিন যাক, তারপর দেখা যাবে। এখন আপাতত কিছু খেয়ে নেয়া দরকার, সত্যিই বড্ড খিদে পেয়েছে।

হাত মুখ ধুয়ে রুমে এসে বসলো মেঘালয়। মিতু খাবার টেবিলে ডেকে নিয়ে গেলো। বাবা মা, মিশু, মিতু ও মেঘালয় এক টেবিলে খেতে বসেছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার পরিবারের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা। তাদের সম্পর্কে বলো না শুনি?'

মেঘালয় বললো, 'আমার বাসায় আব্বু আম্মু আর ছোটবোন। আমি বড়, বোনটা ছোট। বাবার বিজনেস আছে, আম্মু ডক্টর।'

মিশু মাথা নিচু করে খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। খাবার ভেতরে যাচ্ছেনা ওর। বাবা মা অবাক হয়ে মেঘালয়ের দিকে চেয়ে আছেন আর ওর কথা শুনছেন। ছেলেটার কথা বলার ধরণটা অনেক সুন্দর। বেশ গুছিয়ে আর স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে।

মেঘালয় বললো, 'আমি কিছুদিন আগে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির লেকচারার ছিলাম। মা অসুস্থ হওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছি। আপাতত ফ্রি আছি, ভাবছি দ্রুত বিজনেসের দায়িত্ব নিবো। আমি ছাড়া বাবাকে সাহায্য করার আর কেউ নেই।'

মিশুর বাবা প্রসন্ন হেসে বললেন, 'পরিবার যদি জানতে পারে বিয়ের কথা, তাহলে তোমার সমস্যা হবে তাইনা? অযথা তোমাকে বিপদে ঠেলে দিলাম।'

মেঘালয় বললো, 'আরে না না। সেরকম কিছু হবেনা। বাবা মায়ের প্রতি এতটুকু বিশ্বাস আমার আছে। ঘটনাটা বুঝিয়ে বললেই আশা করি ওনারা বুঝবেন। কিন্তু আপনারা কি আসলেই চাইছেন সবকিছু মিটিয়ে নিতে?'

- 'তোমাদের দুজনের উপর নির্ভর করছে সবকিছু। রাগের মাথায় হয়ত খারাপ আচরণ করেছি। সেটা মনে রেখো না। তোমরা দুজন কথা বলে যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে।'

- 'বিয়েটা হঠাৎ হয়েছে বলে সিদ্ধান্তও হঠাৎ নিতে হবে সেটা নয়। দুটো দিন যাক, তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। আমি দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পছন্দ করিনা।'

- 'তোমার দায়িত্ববোধকে সম্মান জানাই বাবা। কথাবার্তা শুনেই বুঝতে পারছি তুমি কেমন পরিবারের ছেলে। তবে তোমার পরিবার মেনে না নিলে এ ব্যাপারটাকে কিভাবে সমাধা করবে বলো?'

- 'আমার উপর ভরসা রাখুন। আর একটু সময় দিন। দেখা যাক কি হয়।'

কথাটা বলেই মিশুর দিকে তাকালো মেঘালয়। মিশু একবার চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে। চোখাচোখি হতেই মেঘালয় বুঝতে পারলো মেয়েটার মাঝে এখন কোনো আবেগ কাজ করছে না। চোখ দুটো পাথরের মত স্তব্ধ হয়ে গেছে। নিথর দেখাচ্ছে ওকে।

মিশু খাচ্ছেনা দেখে মেঘালয় বললো, 'যত রাগ সব তোমার নিজের প্রতি। খাবারের সাথে রেগে লাভ কি বলো? খেয়ে নাও।'

মিশু কিছু বললো না। মেঘালয়ের কথাগুলো শুনতে অসহ্য লাগছে ওর। ছেলেটা কতক্ষণে চলে যাবে সেটাই ভাবছে মনেমনে। উটকো ঝামেলাটা বিদায় হলেই ভালো। বিয়ের ঝামেলাটা চুকে যাক, অতীতের সমস্তকিছু ভূলে যাওয়ার চেষ্টা করবে ও।

আনমনে ভাবতে ভাবতে খেয়ে নিলো মিশু। মেঘালয় ও খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে। ফ্রেশ একটা ঘুম দেয়া দরকার। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েই সবকিছু ভূলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। ঘুম এসে গেলো সহজেই।

মিশু একবার কথা বলার জন্য মেঘালয়ের রুমে এসে দেখলো সে ঘুমাচ্ছে। কত নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মানুষটা। এরকম পরিস্থিতিতেও চোখেমুখে একটুও চিন্তার ছাপ পড়েনি। বরং নিশ্চিন্ত মনে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। অদ্ভুত একটা মানুষ বটে!

মিশুর শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে। জ্বর এসেছে প্রচণ্ড। নিজের রুমে এসে অনেক্ষণ শুয়ে থেকেও ঘুমাতে পারলো না। ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে মগজে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। চিন্তা করতে করতে একসময় ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লো।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)حيث تعيش القصص. اكتشف الآن