80

1K 38 0
                                    

৮০

অফিসের কাজগুলো গোছানোর জন্য অফিসে গেছে মেঘালয়। মিশু বাসায় বসে ব্যাগ গোছাচ্ছে। এখন ওর মন বেশ ফুরফুরে। স্কলারশিপ, ভিসা দূরে যাক। আগে ট্যুর দিয়ে আসি। মেঘালয়ের সাথে ঘুরতে যাওয়া মানেই একটা কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করা। সেই আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার মানেই হয় না।

কলিংবেল বেজে উঠলে দৌড়ে দরজা খুলতে গেলো মিশু। মেঘালয় ভেতরে ঢুকতেই মিশু হাত বাড়িয়ে কোলে ওঠার বায়না ধরলো। মেঘালয় ওকে সরিয়ে দিয়ে সোজা রুমে গিয়ে ঢুকলো। মিশু মুখ কালো করে পিছুপিছু ছুটলো ওর। এসে দেখলো মেঘালয় টাই খুলে রেখে বাথরুমে ঢুকে পড়েছে। মিশু কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলো। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মেঘালয় বাসায় ফিরে একটা কথাও বললো না।
মিশু কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় গিয়ে বসলো। মেঘালয় তোয়ালে চাইলে তোয়ালে হাতে ছুটে বাথরুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল মিশু। কিন্তু তোয়ালে নিয়ে গা মুছে মেঘালয় বেড়িয়ে এলো বাথরুম থেকে। একবার মিশু'র সাথে কথাও বললো না। মিশুর কান্না এসে যাচ্ছে।

মেঘালয় তোয়ালে ছুড়ে মেরে রুম থেকে বেড়িয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলো। মিশু থ হয়ে বসে পড়লো মেঝের উপর। এই লোকটা আজ এমন কেন করছে? তোয়ালে ছুড়ে মারার অভ্যাস তো কখনোই ওনার ছিল না। এই কয়েক ঘন্টায় কিছু হয়েছে বোধহয়।

মেঘালয়ের গলা শোনা গেলো, 'মিশু, এই মিশু।'
মিশু ছুটে এলো খাবার টেবিলে। মেঘালয় টেবিলে বসে আছে। মিশুকে দেখে বললো, 'বসো। খিদে পেয়েছে অনেক।'

মিশু ভয়ে ভয়ে সামনের চেয়ারটায় বসে পড়লো। কোনো কথা না বলে প্লেটে খাবার তুলে দিলো। মেঘালয় খাবার খাওয়ার সময়েও কোনো কথা বললো না। মিশু বারবার ভয় ভয় চোখে তাকাচ্ছিলো ওর দিকে। কিন্তু মেঘালয়ের কোনো ভাবান্তর নেই। সে দিব্যি খেয়েই চলেছে। খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। অথচ প্রতিদিন মিশু'র খাওয়া শেষ না হলে হাত ও ধোয় না সে। মিশু মুখ কাচুমাচু করে তাকাচ্ছে। আর খেতে পারলো না ও।

মেঘালয় জামাকাপড় বদলে চুল আচড়াচ্ছে। মিশু দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, 'কি হয়েছে আপনার?'
- 'কই কিছু না তো।'
- 'আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?'
- 'রেগে থাকবো কেন আজব তো।'
- 'হঠাৎ আপনার সবকিছু বদলে গেছে।'
- 'আরে পাগলী মেয়ে, কিছু হয়নি আমার।'

মেঘালয় ঘড়ি হাতে পড়ে ওয়ালেট খুঁজতে লাগলো। মিশু সেটা এগিয়ে দিতেই মেঘালয় বললো, 'থ্যাংকস।'
তারপর রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য মাত্রই পা বাড়িয়েছে, এমন সময় মিশু ওর পিঠে শার্ট খামচে ধরলো। মেঘালয় পিছন ফিরে বললো, 'কি?'

মিশু অনেক জোরে খামচে ধরে শার্ট ছিঁড়ে নিতে চাইলো। মেঘালয় ওর দিকে হাত বাড়াতেই মিশু ওর বুকে ঢলে পড়লো। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, 'কি হয়েছে আপনার? আমি কি কিছু করেছি? আমাকে এভোয়েড করছেন কেন আপনি?'
মেঘালয় মিশু'র মুখটা তুলে ধরে বললো, 'না রে পাগলী, এভোয়েড করছি না। আমি একটু ঝামেলায় আছি। প্রচুর টেনশন হচ্ছে আমার।'
- 'কেন? আমি ছোট বলে আপনার টেনশনের কারণ শুনতে পারি না?'
- 'ছোট বড় ব্যাপার নয়। বললে তুমিও টেনশন করবে তাই বলতে চাই না। আমার আচরণে কষ্ট পেলে সরি হ্যা?'
- 'সরি বলতে হবে না। শুধু বলুন না কেন এমন করছেন?'
- 'কিছু হয় নি রে পাগলী। আমি আরেকবার বাইরে যাবো। এসে কথা হবে কেমন?'

মেঘালয় মিশুর হাত ছাড়িয়ে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মিশু মৃদু স্বরে বললো, 'আমরা আজকে ঘুরতে যাবো না?'
মেঘালয়ের স্পষ্ট গলা শোনা গেলো, 'না।'

থ মেরে বিছানার উপর বসে পড়লো মিশু। মেঘালয়ের কি হতে পারে সেটা ভেবে অস্থির হয়ে উঠলো।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now