47

1K 36 0
                                    

৪৭.

ডুকরে কান্না করেই চলেছে মিশু। মায়ের মুখে শুনেছে তন্ময়ের বাবা মা মারা গেছে। খারাপ লাগছে ওর। কিন্তু এই সময়ে এসেই নিজের ভূলটা বুঝতে পারলো ও? ওর আগে কোনো ছেলের সাথে কথাও বলেনি মিশু। সেই মানুষ টাকেই ভালোবাসতে চেয়েছিলো পাগলের মত। এখন মেঘালয়কে ছাড়তেও পারবে না, তন্ময় নতুন করে এসে মাথাটা এলোমেলো করে দিতে শুরু করে দিলো। তন্ময়কে এই কয়েকদিনে চরম ঘৃণা করেছে মিশু। কিন্তু ওর অনুশোচনায় দগ্ধ হওয়া চেহারাটা দেখে আর রেগে থাকতে পারছে না। মনেমনে ভাবছে, যদি আবারো তন্ময়ের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায়? তাহলে মেঘালয়ের কি হবে? মেঘালয়কেও ভালোবাসতে আরম্ভ করেছে ও। এদিকে তন্ময় এসে এ কোন দোটানায় ফেলে দিলো ওকে? জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এখন।

পাগলের মত কাঁদতে লাগলো মিশু। মেঘালয় ফোন করলে মিতু রিসিভ করে সবকিছু বলে দিলো।

সবটা শুনে বুকটা ধক করে উঠলো মেঘালয়ের। তন্ময় নিজের ভূল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে? তারমানে মিশু এখন ওর হয়ে যাবে। মেঘালয় আপন মনেই বললো, 'যেহেতু আমাদের মধ্যে এখনও ভালোবাসা হয়নি, কাজেই তন্ময় একবার মাফ চাইলেই মিশু সবকিছু ভূলে গিয়ে ওকেই আপন করে নেবে। কারণ তন্ময় ওকে অনেক ভালোবাসা দেখিয়েছিলো। অবশ্যই আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসা দেখিয়েছে। তাহলে মিশু যদি তন্ময়ের সাথে চলে যায়? আমি মানতে পারছি না এটা।'

বুকটা চিনচিন করছে মেঘালয়ের। একটা অজানা ব্যথা এসে ভর করেছে বুকে। অথচ এর আগে কক্ষনো এমন হয়নি। শুধু একটা কথাই বারবার মনে হচ্ছে, 'আমি তো মিশুকে বলেছি আমি এখনো তোমাকে প্রিয়জনের মত ভালোবাসতে পারিনি। তারমানে তন্ময় একবার ভালোবাসি বললেই মিশু ওর হয়ে যাবে। মিশু তো বলেছে দশদিন পর যদি ভালোবাসা না হয় তাহলে আর কখনো আসবে না। এখন যদি তন্ময় ওকে কেড়ে নিয়ে যায়? এটা কিছুতেই হতে পারেনা।'

বুকের চিনচিনিনি টা বাড়ছে। একটা সেকেন্ডও স্থির হয়ে থাকতে পারছে না মেঘালয়। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে মিশুর কাছে। কিন্তু এত দূরত্বের পথ এখনি যাওয়াও অসম্ভব। ফ্লাইট এত রাতে আছে কিনা কে জানে আর টিকেট ও পাওয়া যাবেনা। তাহলে? কিন্তু একটা কথা মেঘালয় কিছুতেই বুঝতে পারছে না, মিশুকে যদি ভালো নাই বাসবে তবে এরকম ছটফট লাগছে কেন? অন্য একজন পুরুষের আগমন সত্যিই যন্ত্রণা ধরিয়ে দিয়েছে। আর সাথে হারানোর ভয়টাও পেয়ে বসেছে। ভালোই বাসেনা তাহলে হারানোর ভয় কেন? উফফ মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসি কিংবা নাই বাসি, মিশু আর কারো হতে পারেনা।

আপন মনেই বলতে বলতে দেয়ালে মাথাটা বাড়ি দিলো মেঘালয়। এমন সময় মৌনি ওকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে বললো, 'ভাইয়া তুই এমন করছিস কেন? মাথাটা দেয়ালে আঘাত করছিস কেন? কি হয়েছে তোর?'

- 'মিশুকে আর কেউ ভালোবাসবে না। শুধু আমি বাসবো। মিশু শুধু আমার। ওকে অন্যকেউ ছুঁলে আমি তাকে খুন করে ফেলবো।'

- 'এসব বলছিস কেন?'

- 'ওকে শুধু আমি কোলে নেবো। অন্যকেউ কেন নেবে? আমি ওই কুত্তার বাচ্চাকে মেরে ফেলবো। আমার মিশুকে কোলে নেয়ার সাহস ওকে কে দিলো? মিশুর শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপও আমার।'

মৌনি হা হয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি হলো মেঘালয়ের? এমন করছে কেন? কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কে কোলে নিলো আবার?'

মেঘালয় রেগে বললো, 'চুপ। ওকে কেউ ছোঁবে না। আমি সহ্য করতে পারবো না। মৌনি আমি এক্ষুনি ওর কাছে যেতে চাই। প্লিজ কি করবো বল?'

- 'মিশুর কাছে?'

মেঘালয় সবকিছু খুলে বললো মৌনিকে। সবটা শুনে মৌনি বলল, 'তুই এখনই ড্রাইভারকে নিয়ে বেড়িয়ে পড় ভাইয়া। বাসে গেলে সকাল হয়ে যাবে। গাড়িতে গেলে আশাকরি শেষরাতে পৌঁছাতে পারবি।'

- 'ওকে। ভাইয়ার জন্য দোয়া করবি।'

মৌনি মেঘালয়ের চুলগুলো একহাতে ঠিক করে দিয়ে বললো, 'এত ভালোবেসে ফেলেছিস?'

মেঘালয় নিজেও অবাক হয়ে গেলো একটু আগে করা পাগলামি গুলোর কথা ভেবে। মুচকি হেসে বললো, 'জানিনা রে। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, মিশু পাগলীটা আমার হৃদমোহিনী। আমার কলিজাটা। পিচ্চিটাকে আর কেউ কোলে নিলে আমি প্রলয় ঘটিয়ে ছাড়বো।'

মৌনি হেসে বললো, 'পাগল ভাই আমার। সাবধানে থাকবি কেমন?'

অবশেষে দ্রুত বেড়িয়ে পড়লো মেঘালয়। সম্পর্কের মাঝে কাটা ঢুকে পড়েছে। ব্যথা হওয়ার আগেই কাটা উপড়ে ফেলে দিতে হবে। মিশুকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা, বারবার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। সকালেই তো চলে গেলো অথচ রাত হতে না হতেই বুকটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পৌঁছাতে হবে ওর কাছে।

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)حيث تعيش القصص. اكتشف الآن