৫৭
অনেক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসে রইলো মিশু। মনটা বড্ড বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ধীরেধীরে চেষ্টা করছে মনকে শান্ত করার। এরপরের পদক্ষেপ কি হবে সেটাই ভাবছে একমনে। এখন কোথায় যাবে আর কি করবে? মাথায় কিছুই আসছে না।
রুমে এসে বেশ কিছুক্ষণ আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখলো। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। বাহ্যিক চেহারায় কোনো সমস্যা কি আছে? হ্যা আছে। নিজেকে দেখতে ভালো লাগছে না আজকে। এমন কিছু করতে হবে যাতে নিজেরই নিজেকে দেখতে ভালো লাগে।
বাথরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে রইলো অনেক্ষণ। ভিজলো প্রায় এক ঘন্টা ধরে। পুরোটা সময় চোখ বন্ধ করে ছিলো। ধীরেধীরে মনটা শান্ত হয়ে এসেছে।
ফুরফুরে লাগছে অনেক। গা মুছে পোশাক বদলে চুলে তোয়ালে বেঁধে রুমে চলে এলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এবার মুগ্ধ হয়ে গেলো। বাহ! বেশ পরিচ্ছন্ন লাগছে তো। এটা সত্যি যে প্রতিটা মেয়েকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে সুন্দর দেখায়। গোসলের আগে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছিলো, খাওয়া নেই দুদিন ধরে। খাবারের কথা মনে পড়তেই বুঝতে পারলো খিদে পেয়েছে অনেক। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। আগে খেয়ে নেয়া দরকার।
বাসায় আজকে কেউ নেই। চাচা চাচী দুজনেই বাইরে। চাচাতো বোনটা দরজা খুলে দিয়ে টুকটাক কথা বলে সেও বাইরে চলে গেছে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। তবে ফাঁকা বাড়িতেই ভালো লাগছে। একাই টেবিলে বসে খাবার খেয়ে নিলো মিশু। তারপর রুমে চলে এলো। মাথা থেকে তোয়ালে খুলে আয়নার দিকে তাকালো। ভেজা চুল হাত দিয়ে আচড়ে নিলো। মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে স্নিগ্ধ মনেহচ্ছে। আচ্ছা, ওরা বারবার কেন যোগ্যতা নিয়ে কথা বলে? চেহারায় তো কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা কি তাহলে?
অনেক্ষণ ধরে চিন্তা ভাবনা করার পর আবিষ্কার করলো সমস্যা হচ্ছে আউটলুকিংয়ে। স্মার্টনেসের একটা প্রধান শর্ত হচ্ছে আউটলুক। শুধু মনের দিক থেকে সুন্দর হলেই হয়না। আউটলুক বদলানো প্রয়োজন। বাহ্যিক রূপটাকেও যেন দেখতে মানানসই আর সুন্দর দেখায়। সর্বপ্রথম একটু রেস্ট নেয়া দরকার, তারপর অন্যকিছু। অনেকদিন ধরে যা ধকল গেলো!
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুম এসে গেলো। টানা তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো রাত আট টায়। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখলো চাচাতো বোন মিফতা চা নিয়ে এসেছে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে মিশু সংক্ষিপ্ত করে ঘটনাটা খুলে বললো মিফতাকে।
সব শুনে মিফতা বললো, 'এখন কি করার চিন্তাভাবনা করছিস?'
- 'জানিনা। আব্বু আম্মুর সাথে এখনো কথা হয়নি।'
- 'ওরা নিশ্চয়ই বলবে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে।'
- 'বলুক। আমি যাবো না। আমি মেঘালয়কে কথা দিয়েছি তার সম্মান উঁচু করে নিজে সম্মানের সাথ ওই বাড়িতে যাবো।'
- 'তাহলে ভাব এখন কি করবি?'
মিশু নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। পরক্ষণেই মাথায় একটা ব্যাপার ঝিলিক খেলে গেলো। কয়েকদিন আগে শুনেছিলো স্কলারশিপ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এপ্লাই তো করাই আছে, পরীক্ষা দেয়া যায় কিনা?
মিফতা শুনে বললো, 'লং টাইম পড়াশোনা করিস না। পারবি কি?'
মিশু আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো, 'আমি ইংলিশে অনেক ভালো। বিয়ের আগে অনেক প্রাকটিস করেছি। স্কলারশিপ এক্সামটা দেয়ার জন্য অনেক প্রস্তুতি ও নিয়েছি। আমি একটা সুযোগ নিতে চাই। পরীক্ষা কবে দেখতে হবে।'
এরপর অনলাইন ঘেঁটে দেখতে পেলো একদিন পরেই পরীক্ষা। পুরো শরীরে ঝংকার খেলে গেলো মিশুর। গতবার যারা পরীক্ষা দিয়েছিলো তাদের কাছে শুনেছে এই পরীক্ষায় শুধুমাত্র ইংলিশ বেসিক রুলস থেকেই প্রশ্ন হয়। খুব একটা কঠিন প্রশ্ন হয়না। কারণ আমাদের দেশেই একমাত্র পরীক্ষাটা হচ্ছে আর এদেশের শিক্ষার্থীরা ইংলিশে ততটা দক্ষ নয়। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, 'আইসিসি আর' স্কলারশিপের কথা আমাদের দেশের বেশিরভাগ ছাত্র ই জানেনা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় খুব কম সংখ্যক ছাত্র। একটু ভালো করলেই টপকে যায়। ছোটবেলা থেকেই মিশু ইংলিশে অনেক ভালো। প্রতিটা ইংরেজি পরীক্ষায় ওর 'এ প্লাস' থাকবেই। আর ইংলিশে কথা বলতেও অনেক পটু। প্রতিদিন ই অন্তত ২০০ টা ট্রান্সফরমেশন অব সেন্টেন্স করতো। আশা করা যায় পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব।
অনেক উত্তেজনা বোধ করছে মিশু। অনেকদিনের ধকলে মনটা মরে গিয়েছিলো যেন। পরীক্ষার কথা ভেবে আবারো উত্তেজিত হয়ে উঠলো। ইংরেজি ওর সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। এত বছর ধরে ইংরেজিতে ভালো ফলাফল করে এসেছে ও। এবার এই পরীক্ষায় নিজের সবটুকু ঢেলে চেষ্টা করতে হবে। পাশ করতে পারলেই আর বাবা মায়ের কাছেও বোঝা হয়ে থাকতে হবেনা। ভার্সিটিতে ভর্তি থেকে শুরু করে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করা পর্যন্ত সমস্ত খরচ সরকার বহন করবে। উফফ! খুব উত্তেজনা কাজ করছে।
YOU ARE READING
হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)
Adventureমিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনট...