45

1.1K 41 0
                                    

৪৫

বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে মিশু ও মেঘালয়। মাঝখানে একহাত দূরত্ব। দুজনে দুদিকে কাৎ হয়ে শুয়ে আছে। বিয়ের পর থেকে প্রত্যেকটা রাত এই সময়ে মেঘালয়ের স্পর্শে পাগল হয়ে যেতো মিশু। একটা সময় মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তো। আর আজ দুজনে দুদিকে! কোনো ঝগড়া হয়নি, তর্ক হয়নি অথচ কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলতে পারছে না। দুজনেরই নিজেকে ছোট ছোট লাগছে।

মেঘালয় কখনো মুখে না বললেও মনেমনে চাইতো ওর জীবনসঙ্গিনী ওর সমান সমান হবে। মিশুর বয়সও নিন্তান্তই কম। মনেপ্রাণে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও কেন যেন ভালোবাসাটা ঠিকমত হয়ে উঠছে না। মন থেকে ভালোবাসতে পারছে না ওকে। দশদিন পর কি আদৌ সম্ভব হুট করে ভালোবাসা হয়ে যাওয়া? না হলেও মিশুকে গ্রহণ করতে হবে। নয়তো অন্যায় করা হবে ওর সাথে। আবার গ্রহণ না করলেও অন্যায় হয়ে যাবে। দুটো ব্যাপার ভেবেই মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে মেঘালয়ের। ভালোবাসা আকস্মিক ভাবে জন্ম নেয়। ইচ্ছেকৃত ভাবে কাউকে ভালোবাসা যায়? সেটা তো অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত। উলটা পালটা অনেক কিছু ভেবে মেঘালয় নির্ঘুম রাত পার করছে।

মিশু নিরবে চোখের জল ফেলছে। শীত লাগছে খুব। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঠাণ্ডাও বাড়ছে। কিন্তু উঠে কম্বল টেনে নেয়ার কোনো ইচ্ছেই করছে না ওর। ঠাণ্ডায় রীতিমত কাঁপতে লাগলো। অজান্তেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো, 'এত শীত লাগছে কেন!'

মেঘালয় চমকে উঠে পাশ ফিরলো। মিশু অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। মেঘালয় নিজেই কম্বল টেনে নিয়ে মিশুর গায়ের উপর দিয়ে দিলো। নিজেও ঢুকে পড়লো কম্বলের ভেতর। মাঝখানে এখনও এক হাত দূরত্ব। দুজনে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। অনেক রাত অব্দি শুধু একে অপরকে অনুভব করেই গেছে সেটা কেউই জানেনা। নানান আজগুবি চিন্তা ভাবনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো একসময়।

সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর মিশু উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে বুঝতে পারলো মেঘালয়ের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে। একহাতে জাপটে ধরে আছে মেঘালয়কে আর সে নিজেও দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মিশুকে। দুজনে তো মাঝখানে একহাত দূরত্ব রেখে ঘুমিয়েছিলো তাহলে এভাবে জড়াজড়ি করে শুয়ে পড়লো কখন? নাকি মেঘালয় টেনে নিয়েছে কাছে? প্রশ্নটা মাথায় রেখেই ওঠার চেষ্টা করলো মিশু। মেঘালয় ওর বাহুতে টেনে ধরে বললো, 'উহু নড়াচড়া করছো কেন? কতবার বলেছি আমাকে বিছানায় একা ফেলে উঠবা না?'

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now