39

975 41 1
                                    

৩৯.

মৌনির কথামত মিশুর বাবা সোজা গেলেন উপজেলা পরিষদে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে সরাসরি বসে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললো সায়ান ও পূর্ব। মেঘালয় আর আকাশ আহমেদের সম্মানের ব্যাপারটাও বুঝিয়ে বলা হলো। মিশুর বাবা অনুরোধ করে বললেন, 'বিয়েটা একটা দূর্ঘটনাবশত ঘটলেও আমরা দুই পরিবার মেনে নিয়েছি এটা। এখন এই ছেলেটা অযথা এরকমভাবে বাজে ব্যাপার রটিয়ে দিয়ে মান সম্মান নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। ভাই, কিছু একটা ব্যবস্থা নিন।'

উপজেলা চেয়ারম্যান মিশুকে ও ওর বাবাকে আগে থেকেই চিনতেন। মিশুর বাবার মোটামুটি ধরণের একটা সুনাম আছে নিজের এলাকায়। তার সম্মানের সাথে জড়িয়ে আছে ব্যাপারটা, আর একটা মিথ্যেকে জিততে দেয়া যায়না। উনি রাজী হলেন সাহায্য করতে।

এরপর সরাসরি থানায় জিডি করার পর সেই ছেলেটাকে ধরে এনে স্বীকারোক্তি নেয়া হলো। ছেলেটা নিজ মুখে বললো, 'জ্যাঠা আর মিশুর সম্মানহানির জন্যই এই কাজ করেছি। মিশু ও ওর স্বামী এরকম কোনো কাজই করেনি।'

এভাবে উক্তি নিয়ে ভিডিওটা সেই ছেলের আইডি থেকেই আপলোড করে দেয়া হলো। তারপর ওকে হাজতে ঢুকিয়ে দিয়ে সায়ান ও পূর্ব মিশুদের বাসায় গেলো। মৌনি ফোনে উপজেলা চেয়ারম্যানকে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পর যে ব্যাপারটা ঘটলো সেটা কেউ কল্পনাও করেনি।

উনি নিজ মুখে মৌনিকে বললেন, 'আপনার সাথে কথা বলে সত্যিই ভালো লাগছে। একটা মানুষের চিন্তাশক্তি কিভাবে এতটা সুন্দর হতে পারে? আমি যদি আপনাদেরকে সাহায্য করতে চাই?'

মৌনি অবাক হয়ে বললো, 'কৃতজ্ঞ হলাম। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা। আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।'

এরপর চেয়ারম্যান নিজে একটা ভিডিও বানালেন আর সাথে স্থানীয় পত্রিকাতেও রিপোর্ট করে দিলেন। রিপোর্টটা ছিলো এরকম -

"সমাজ ভালো মানুষগুলোকে এভাবেই খুন করতে প্রস্তুত। অথচ যারা সত্যিকার অর্থে অপরাধী, তাদের কোনো বিচারের দায় কেউই নিতে চায়না। গত কয়েকদিন আগে মিশু নামক এক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হতে হতেও বেঁচে যায়। সেখান থেকে পালিয়ে এসে রাস্তায় বেহুশ হয়ে পড়েছিলো। যে মানুষটা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে,নিজ দায়িত্বে বাসায় পৌঁছে দিতে চাইছে, সেই মানুষ টাকেই আজ এই ধর্ষণের দায় দেয়া হচ্ছে। এ কেমন নিয়ম? মেঘালয় নামক ছেলেটার সম্পর্কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নিয়েছি। তার মত ভালো মানুষ কমই হয়। 

অথচ তাকে নিয়েই আমাদের এলাকায় এমন কুৎসা রটে গেছে আর পাশাপাশি তার পরিচিত মহলেও তাকে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা সবার জানা দরকার। তাদের নামে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে সেটা নিতান্তই ষড়যন্ত্র। সত্যিকার ঘটনার মূলে আছে একটা করুণ ইতিহাস। মিশুর হাঁটার মতও অবস্থা ছিলোনা, সে এতটাই অসুস্থ ছিলো। মিশুর কথা বলার মতও অবস্থা ছিলো না। বাধ্য হয়েই মেঘালয় ওকে কোলে নিয়ে যাচ্ছিলো। গ্রামের মূর্খ কিছু মাতাল ব্যাপারটাকে বিশ্রী বানিয়ে এলাকার সামনে উপস্থাপন করেছে। মেঘালয়ের ফোন, টাকা পয়সা সবকিছু কেড়ে নিয়ে এরপর এলাকায় অনেক অপমানও করা হয়। তারপর মিশুর আত্মীয় স্বজনরা জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় দুজনের মধ্যে। বিয়ের পর সত্যিকার ঘটনা প্রকাশ পায় সবার সামনে। মিশুর পরিবার চেয়েছিলো ভূল শুধরানোর জন্য মেয়েকে ছাড়িয়ে নিতে। কারণ, ভুলটা যেহেতু তাদেরই। অযথা একজন ভালো মানুষকে ঝামেলায় ফেলে দিতে চাননি তারা।

 কিন্তু এক্ষেত্রে মেঘালয় চরম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। সে নিজেই মিশুর দায়িত্ব নিয়ে বলে, "মিশু এখন আমার স্ত্রী। আমি দায়িত্ব এড়াতে পছন্দ করিনা।" এরপর দুই পরিবারই কথা বলার মাধ্যমে বিয়েটা মেনে নেয়। মিশু এখন তার শ্বশুরবাড়িতেই আছে। তারা দুজন, দুটো পরিবারের সকলেই খুশি। মাঝখান থেকে এক ছেলে অযথা এদেরকে নিয়ে ভূলভাল তথ্য ছড়িয়ে এলাকাবাসীর কাছে মেঘালয়কে হাসির পাত্র বানিয়ে দিচ্ছে, পাশাপাশি সমস্ত আত্মীয় স্বজনের কাছেও মুখ দেখানোর মত অবস্থা আর নেই।

 মেঘালয় একজন ইউনিভার্সিটির লেকচারার ছিলেন। তাকে শিক্ষার্থীরা গুরুর মত সম্মান করতো। তাকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছেও উপহাসের পাত্র বানানোর চেষ্টা করার মত অপরাধের দায়ে মানহানির মামলা করা হয়েছে মাসুদের ( মিশুর চাচাতো ভাই এর) নামে। একজন অপরাধী তো শাস্তি পেলো কিন্তু যারা এরকম একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে গ্রামের মানুষদের সামনে অপমানিত করলো, টাকা পয়সা মোবাইল ফোন সব কেড়ে নিয়ে আবার বেঁধেও রেখেছিলো। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। উক্ত এলাকায় সম্প্রতি কিছু মাতাল ও ছিনতাইকারীর উদ্ভব হয়েছে। এদের নির্মূলের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি মিশুকে ধর্ষণের মত জঘন্য আচরণ দ্বারা উত্যক্ত করার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও দৃষ্টি আরোপ করা জরুরি।"

হৃদমোহিনী ( সম্পূর্ণ)Where stories live. Discover now